শেফিল্ডে কত বেতন পেতেন হামজা, আগামী মৌসুমে খেলবেন কোন ক্লাবে
একজন বড় মাপের খেলোয়াড় একটা দেশের ফুটবলীয় পরিমণ্ডল কীভাবে বদলে দিতে পারেন, সেটার জ্বলজ্বলে উদাহরণ হামজা চৌধুরী। হামজার আগমনে বাংলাদেশের ফুটবল যেন তার হারানো যৌবন ফিরে পেয়েছে। ফুটবল নিয়ে পুরো দেশেই নতুন করে উন্মাদনা তৈরি হয়েছে, যা বহুদিন দেখা যায়নি।
হামজার দেখানো পথে আরও দুই প্রবাসী ফাহামিদুল ইসলাম, শমিত সোমেরও বাংলাদেশের জার্সিতে অভিষেক হয়েছে। ঢাকার জাতীয় স্টেডিয়ামে পরশু এএফসি বাছাইপর্বের ম্যাচে সিঙ্গাপুরের কাছে হারলেও প্রত্যেকেই দারুণ খেলেছেন। গতকাল সকালে হামজা ও শমিত একই ফ্লাইটে ঢাকা ছেড়েছেন। হামজা গেছেন ইংল্যান্ডে, শমিত কানাডায়। তবে ইংল্যান্ডে হামজার ঠিকানা এবার বদলে যাচ্ছে। শেফিল্ড ইউনাইটেডের সঙ্গে ধারের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় ২৭ বছর বয়সী এই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারকে ফিরতে হচ্ছে মূল ক্লাব লেস্টার সিটিতে। লেস্টারের সঙ্গে তাঁর আরও দুই বছর চুক্তি আছে। যদিও গ্রিসের ক্লাব অলিম্পিয়াকোসে নাম লেখানোর সম্ভাবনার কথাও শোনা যাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত গুঞ্জন সত্যি হলে আগামী মৌসুমে হামজাকে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলতে দেখা যাবে। তবে ক্লাব পরিবর্তনের ক্ষেত্রে তিনি নিশ্চয়ই আর্থিক বিষয়–আশয়ও ভেবে দেখবেন।
হামজার সঙ্গে শেফিল্ডের ধারের চুক্তি ছিল ২৭ জানুয়ারি থেকে ৩১ মে পর্যন্ত। এই ১২৪ দিনে তাঁর পাওয়ার কথা ৭ লাখ ৩৪ হাজার ৫৭৬ ইউরো (১০ কোটি ২৫ লাখ ৪৬ হাজার টাকা)।
ক্যাপোলজি আরও বলছে, ২০২৪–২৫ মৌসুমে হামজাই ছিলেন শেফিল্ডের সর্বোচ্চ বেতনভোগী ফুটবলার। তাঁর সমান বেতন পেয়েছেন চিলিয়ান ফরোয়ার্ড বেন ব্রেরেটন দিয়াজ ও ইংলিশ স্ট্রাইকার রিয়ান ব্রুস্টার।
২৭ জানুয়ারির আগে হামজা খেলেছেন লেস্টার সিটিতে। তবে সেখানে তাঁর সাপ্তাহিক বেতন অনেক কম ছিল—১৭ হাজার ৭৭৪ ইউরো (২৪ লাখ ৭৮ হাজার টাকা)। সেই হিসাবে দৈনিক আয় ছিল ২ হাজার ৫৩৯ ইউরো (৩ লাখ ৫৪ হাজার টাকা)। এই বেতন শেফিল্ডে পাওয়া বেতনের অর্ধেকেরও কম। আবার লেস্টারে ফেরার পর হামজার বেতন আগের মতোই থাকবে নাকি বাড়বে, তা জানা যাবে ২০২৫–২৬ মৌসুম শুরুর পর।
লেস্টার হামজাকে ধারে শেফিল্ডে পাঠানোর সময় চুক্তিপত্রে একটি বিষয় উল্লেখ ছিল যে, শেফিল্ড চাইলে তাঁকে একেবারে কিনেও নিতে পারবে। তবে বাংলাদেশের তারকা মিডফিল্ডারকে ক্লাবটি এমন কোনো প্রস্তাব দিয়েছে বলে খবর পাওয়া যায়নি।
হামজা নিজেও নাকি ক্লাব ফুটবলে ভবিষ্যৎ গন্তব্য নিয়ে দ্বিধায় আছেন। কদিন আগে প্রথম আলোর সঙ্গে আলোচনায় এমনটাই জানিয়েছেন তাঁর বাবা মোরশেদ দেওয়ান চৌধুরী, ‘না, এখনো সেটা (শেফিল্ডে থাকবেন নাকি লেস্টারে ফিরে যাবেন) ঠিক হয়নি। আমি নিজেও ওর কাছে জানতে চেয়েছি। সে বলল, “জানি না।” তাই এখনই বলতে পারছি না।’
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ মৌসুম ১৮তম হয়ে শেষ করায় লেস্টার সিটির অবনমন হয়েছে। ওদিকে শেফিল্ড ইউনাইটেড প্রিমিয়ার লিগে ওঠার সুবর্ণ সুযোগ তৈরি করেও শেষ পর্যন্ত পারেনি। চ্যাম্পিয়নশিপের প্লে–অফ ফাইনালে হামজার শেফিল্ড হেরে গেছে সান্ডারল্যান্ডের কাছে। এর ফলে ২০২৫–২৬ মৌসুমে লেস্টার–শেফিল্ড দুই ক্লাবকেই দ্বিতীয় স্তরের প্রতিযোগিতায় খেলতে হবে।
রুড ফন নিস্টলরয় লেস্টারের কোচ হওয়ার পর হামজাকে বলতে গেলে খেলার সুযোগই দেননি। তবে শেফিল্ড কোচ ক্রিস ওয়াইল্ডার তাঁর ওপর আস্থা রেখেছেন। প্রায় প্রতি ম্যাচেই তাঁকে শুরু থেকে খেলিয়েছেন। ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করলেও শেফিল্ডে হামজাকে বেশিরভাগ সময় খেলতে হয়েছে রাইট–ব্যাক হিসেবে। এই পজিশনেও তিনি দারুণভাবে মানিয়ে নিয়েছিলেন।
লেস্টার শহরের স্থানীয় পত্রিকা লেস্টার মার্কারি বলছে, শেফিল্ড প্রিমিয়ার লিগে উঠলে তারা হামজাকে লেস্টারের কাছ থেকে কিনে নেওয়ার প্রস্তাব দিত। কিন্তু হামজা হয়তো টানা দুই মৌসুম ক্লাবটির হয়ে চ্যাম্পিয়নশিপে খেলতে চাইবেন না। এদিকে লেস্টার নাকি তাঁকে বিক্রি করে দিতে চায়।
Post a Comment